Press ESC to close

শিশুর মানসিক বিকাশে বাবা-মা এর প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ

শিশুর মানসিক বিকাশ সঠিকভাবে নিশ্চিত করা প্রতিটি বাবা-মায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যা শিশুর শৈশব থেকে শুরু করে তারুণ্য পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। মানসিক বিকাশ শিশুকে আত্মবিশ্বাসী, সৃজনশীল এবং দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। সন্তানের মানসিক বিকাশে সহায়ক বাবা-মায়ের করণীয় বিষয়গুলো যথা সম্ভব বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

ভালবাসা ও ইতিবাচক সমর্থন প্রদান করা

শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের ভালবাসা ও সমর্থন অপরিহার্য। সন্তানের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা প্রদর্শন এবং তার সাফল্য ও প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দেওয়া তার আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। আপনার সন্তান কোনো কাজ সম্পন্ন করলে “তুমি খুব ভালো করেছ” বা “তোমার প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়” বলুন।

এটি তার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। তাকে অনুভব করান যে আপনি সবসময় তার পাশে আছেন।

  • সন্তানের ছোট ছোট সাফল্য উদযাপন করুন।
  • ভুল করলে তাকে শান্তভাবে বোঝান এবং নতুন করে চেষ্টা করতে উৎসাহ দিন।

উদাহরণঃ পরীক্ষায় ভালো ফল করলে তার পছন্দের খাবার রান্না করুন বা তাকে একটি ছোট উপহার দিন।

সন্তানের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কের একটি স্থির চিত্র।

সন্তানের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা

শিশুর মানসিক বিকাশের প্রথম ধাপ হলো তার সাথে একটি বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তোলা। আপনার নিয়মিত যোগাযোগ শিশুকে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে সাহায্য করবে।

  • প্রতিদিন কিছু সময় শুধু সন্তানের সাথে কথা বলুন।
  • তাকে তার মতামত ও অনুভূতির মূল্য দিন।
  • তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং উত্তর দিন।

উদাহরণঃ যদি সন্তান তার স্কুলের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে চায়, তবে তাকে বাধা না দিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাকে প্রশ্ন করুন, আজ স্কুলে সবচেয়ে মজার বিষয় কী ঘটেছিল অথবা আপনার সন্তান স্কুল হতে ফেরার পর, আজ নতুন কী শিখল তা জানতে চাইতে পারেন।

পাঠাভ্যাস ও সৃজনশীলতা এবং কল্পনাশক্তিকে উজ্জীবিত করা

শিশুর মানসিক বিকাশে সৃজনশীলতা এবং কল্পনাশক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাকে এমন পরিবেশ দিন যেখানে সে নিজের ভাবনাগুলো প্রকাশ করতে পারে।

বই পড়া, গল্প শোনা, ছবি আঁকা বা গান গাওয়ার মতো সৃজনশীল কাজে সন্তানের অংশগ্রহণ তাকে মানসিকভাবে সমৃদ্ধ করে। এতে তার কল্পনাশক্তি এবং চিন্তাভাবনার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

উদাহরণঃ শিশুকে খাতা দিন এবং কিছু আঁকতে উৎসাহিত করুন। পরে তার বা তাদের সাথে অংকনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন।

সামাজিক দক্ষতা উন্নত করা

শিশুর মধ্যে সহমর্মিতা এবং সহযোগিতার গুণাবলি বিকাশের জন্য তাকে সামাজিক হতে উৎসাহিত করুন।

শিশুকে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন এবং সহপাঠীদের সাথে সময় কাটাতে উৎসাহিত করুন। সামাজিক পরিবেশে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সে সহমর্মিতা, সহযোগিতা এবং দলগত কাজের গুরুত্ব শিখতে পারবে।

উদাহরণঃ তাকে খেলাধুলার দলে যোগ দিতে উৎসাহ দিন।

ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ

ইলেকট্রনিক ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুর মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই দৈনিক ব্যবহার সময়সীমা নির্ধারণ করুন এবং তাকে বাইরের খেলাধুলায় উৎসাহিত করুন।

উদাহরণঃ বিকেলে তাকে মাঠে বা পার্কে যেতে উৎসাহিত করুন।

ইতিবাচক শৃঙ্খলা বজায় রাখা

শৃঙ্খলা শেখানোর সময় শিশুকে ভয় না দেখিয়ে ইতিবাচক পদ্ধতি অবলম্বন করুন। তাকে বোঝান কেন শৃঙ্খলা গুরুত্বপূর্ণ। যদি সন্তান ভুল করে তবে রাগ করার পরিবর্তে তাকে বুঝিয়ে বলুন। তার আচরণের পেছনের কারণ বুঝতে চেষ্টা করুন।

  • তার ভুলগুলোকে শাস্তি না দিয়ে ধৈর্য সহকারে শেখার সুযোগ দিন।
  • ভালো আচরণে তাকে পুরস্কৃত করুন।

উদাহরণঃ সময়মতো পড়া শেষ করলে তাকে গল্প শোনানোর প্রতিশ্রুতি দিন।

পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব বোঝানো

শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য সুষম খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। শিশুর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফল/ শাকসবজি/ দুধ/ ডিম/ বাদাম অন্তর্ভুক্ত করুন। এতে তার মস্তিষ্কের বিকাশ সঠিকভাবে হবে। শিশুকে অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলতে সচেতন করুন।

উদাহরণঃ সকালের নাস্তায় একটি ফল বা দুধ যোগ করুন এবং বিকেলের খাবারে বাদাম দিন।

স্বাধীনতা এবং দায়িত্বশীলতা শেখানো

শিশুকে ছোট ছোট দায়িত্ব দিন এবং তার স্বাধীন চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করুন।

  • শিশুকে নিজের পড়ার টেবিল গুছিয়ে রাখতে বলুন।
  • বাড়ির ছোট কাজে তাকে সাহায্য করতে বলুন। এতে তার দায়িত্বশীলতার দক্ষতা বাড়বে এবং আত্মনির্ভরশীলতা গড়ে উঠবে।

উদাহরণঃ বাসার বাগানটি পরিচর্যা করতে উৎসাহিত করুন। এতে তার কাজ করার অভ্যাস গড়ে উঠবে।

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিন। যদি কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন তবে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

উদাহরণঃ, যদি সন্তান অতিরিক্ত চুপচাপ হয়ে যায়, তবে তার সাথে সময় কাটান এবং কারণটি জানার চেষ্টা করুন।

উদাহরণ স্থাপন করুন

সন্তানের সামনে আপনি যেভাবে আচরণ করবেন, সে অনেকাংশে তাই অনুসরণ করবে। তাই তার সামনে ইতিবাচক এবং সৎ আচরণের উদাহরণ স্থাপন করুন।

উদাহরণঃ যদি আপনি গুছিয়ে সময়ের কাজ সময়ে শেষ করেন এবং কাঙ্ক্ষিত ফলের জন্য ধৈর্যশীল হন তাহলে আপনার সন্তানও তাই শিখবে।

সন্তানের সামনে বাবা-মা এর সঠিক আচরণের চিত্র।

সন্তানের সামনে বাবা-মা এর ভুল আচরণের একটি চিত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *