Press ESC to close

নব জাতকের নখ বা চুল কতদিন পর ফেলতে হয়

শিশুর জন্ম গ্রহনের পর হতেই নতুন মায়েদের বিভিন্ন বিষয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। নতুন মায়েরা অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেন না, কিভাবে ও কখন কী করা উচিত। অনেক দুশ্চিন্তার মধ্যে একটি হলো কত দিন বয়সে চুল ফেলতে হবে এবং কখন ফেলতে হবে হাত পায়ের নখ।



নবজাতকের নখ বা চুল কত দিন পর ফেলতে হয় এই বিষয়ে আমাদের সমাজে নানা ধরণের কথা প্রচলিত রয়েছে।

 

অনেকেই মনে করেন, শিশুর জন্মের পরপরই তার চুল ফেলে দিতে হবে কারণ মায়ের গর্ভে থাকাকালে শিশুর চুলে যে আঠালো পদার্থ লেগে থাকে তা অপবিত্র এবং পরিচ্ছন্ন হতে হলে জন্মের পরই শিশুর চুল কাটা উচিত (যার নির্ভরযোগ্য কোন সুত্র নেই)। কিন্তু ওই আঠালো পদার্থ আসলে বাইরের বিরূপ আবহাওয়া থেকে নবজাতককে রক্ষা করে। এটি নবজাতককে সহজে শীতল হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে ও দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখে। এই আঠালো আবরণ চুল থেকে মুছে দিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। এই কারনের জন্য চুল কাটার প্রয়োজন নেই। চুল মাথা ঢেকে রাখে। যেহেতু নবজাতকের অপরিণত মস্তিষ্ক জন্মের পরপরই সঠিকভাবে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তাই জন্মের পরপরই চুল ফেলে দিলে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। চুল কাটার যন্ত্র বা ব্লেড দিয়ে নবজাতকের চুল চেঁচে ফেলার সময় দুর্ঘটনাবশত মাথার ত্বক কেটে যেতে পারে। এ ছাড়া মাথার এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত শিশুদের মাথার তালু নরম থাকে। নরম তালুতে যেন চাপ না পড়ে, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর চুল একদম চেঁচে না ফেলে কিছুটা ছোট করে দিতে পারেন। শিশুর তিন মাস বয়সের কাছাকাছি সময়ে চুল কাটানো ভালো। কারণ, এই তিন মাসের মধ্যেই শিশু বেশ বড় হয়ে যায়, ঘাড় মোটামুটি শক্ত হয়ে যায়। তবে এক বছর পর্যন্ত চুল কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করলেও তেমন সমস্যা নেই। চাইলে কিছুটা ছোট করে দিতে পারেন। যদিও অঞ্চল ও সংস্কৃতিভেদে এর কিছু তফাত রয়েছে।
চুল কাটার কাজ অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে করাই ভালো। কারণ, নবজাতকের ত্বক খুবই নাজুক। যে যন্ত্র দিয়ে কাটা হবে, তা অবশ্যই জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার থাকা জরুরী। চুল কাটার পর শিশুকে ভালোমতো পরিষ্কার করে দিতে হবে, যেন কাটা চুলগুলো থেকে তার কোনো অস্বস্তি না হয়।

তিন মাস বয়সের কাছাকাছি সময়ে ন্যাড়া করা শিশুর ছবি।

একটি বহুল প্রচলিত ধারণা হলো, শিশুর চুল ঘন হওয়ার জন্য বারবার মাথা ন্যাড়া করতে হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিশুর চুল ঘন হওয়া নির্ভর করে তার চুলের ত্বকের ফলিকলের ওপর, যা কিনা তার জন্মগত বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও চুল ঘন হওয়ার জন্য শিশু যেন পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় তা খেয়াল রাখতে হবে।

 

নবজাতকের নখ খুবই নমনীয় এবং খুব দ্রুত এদের নখ বেড়ে যায়। নখে ধুলাকণা ও রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন জীবাণু জমতে পারে। শিশুদের মধ্যে আঁচড়ানোর প্রবণতা থাকে। এতে অন্য কারও ত্বকে বা জামায় লেগে থাকা জীবাণু তাদের নখে জমা হয়ে পরে ত্বকে ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে। আঙুল মুখে নিলে সেই জীবাণু সহজেই শিশুর শরীরে প্রবেশ করে এবং অসুস্থতার কারণ হতে পারে। তাই নখ কাটার বিষয়টি উপেক্ষা করা উচিৎ না।

নবজাতকের হাতের নখ দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও পায়ের নখ বাড়তে সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে একবার হাতের এবং মাসে একবার পায়ের নখ কাটা যেতে পারে। তবে এ সময়ের মধ্যে নখ বেড়ে গেলে তা কেটে ফেলতে হবে। শিশু যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখনই নখ কাটার উপযুক্ত সময়। শিশুদের জন্য তৈরি বিশেষ নেইল কাটার বা নেইল ক্লিপার নখ ফেলার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। শিশুর নখ কাটার সময় পর্যাপ্ত আলো থাকতে হবে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তা না হলে কম আলোতে নখ কাটার সময় ত্বক কেটে যেতে পারে। জেগে থাকা অবস্থায় নখ না কাটাই ভালো, এতে শিশু প্রচুর নড়াচড়া করে নখ কাটাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলতে পারে। নখ কাটার আগে শিশুর আঙুলগুলো হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে নিলে কাটতে সহজ হয়। শুধু নখের সাদা অংশটুকু যেন কাটা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *