
প্রত্যেক মা-বাবার স্বপ্ন থাকে, তাঁদের সন্তান যেন ভালো থাকে, সুখী হয় এবং ভবিষ্যতে সফল ব্যক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু সেই সফলতার ভিত্তি কোথায় গড়ে ওঠে!
গবেষণায় দেখা গেছে, ছোটবেলা থেকে ঘরের কাজে অংশগ্রহণ করা শিশুর মানসিক ও ব্যক্তিগত বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমনকি সফল ও সুখী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই শৈশবে নিয়মিত ঘরের কাজে অংশ নিয়েছে।
দুবাইয়ের দানাত আল ইমারাত হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ও সাইকোলজিস্ট ডাঃ হাবিব আবদুল্লাহ বলেন, শিশুদের ছোটবেলা থেকেই ঘরের কাজে যুক্ত করা হলে তাদের আত্মনির্ভরশীলতা, ধৈর্য ও সহনশীলতা বাড়ে। তারা ব্যর্থতা মেনে নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে এবং নতুন উদ্যমে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে শেখে। এছাড়াও, ছোট থেকেই কাজের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হলে ভবিষ্যতে কর্মজীবনে তারা অধিক দক্ষ ও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে।
ঘরের কাজ শিশুদের সফল হতে কীভাবে সাহায্য করে?
১. আত্মনির্ভরশীলতা ও দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে: – শিশুরা যখন ছোট থেকেই ঘরের কাজ করতে শেখে, তখন তারা দায়িত্ব নিতে শেখে। এর ফলে ভবিষ্যতে তারা নিজেদের কাজের প্রতি সচেতন হয় এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
২. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়:
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু ঘর গুছিয়ে রাখা ও রান্নার মতো কাজে অংশ নেয়, তারা সমস্যা সমাধানে বেশি দক্ষ হয়। এটি তাদের সৃজনশীলতা ও চিন্তা শক্তির বিকাশে সাহায্য করে।
৩. ধৈর্য ও মানসিক সহনশীলতা তৈরি হয়:
রান্না বা ঘরের কাজ করার সময় শিশুরা শিখে যে কিছু কাজ সম্পন্ন করতে ধৈর্যের প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি সফলতার জন্য এই গুণটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. শৃঙ্খলা ও সময় নিয়ন্ত্রণ শেখায়:
নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা, কাজের গুরুত্ব বুঝে কাজ করা—এসব শিশুদের ভবিষ্যতের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে অনেক উপকারে আসে।
বয়স ও বিকাশ ভেদে শিশুদের জন্য প্রজোয্য কাজের ধারণা নিন্মরূপ
শিশুর বয়স ও বিকাশ অনুযায়ী তাদের কাজ ভাগ করে দেওয়া উচিত। এতে তারা ধাপে ধাপে দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
৩–৫ বছর বয়স:
- খেলনা গুছিয়ে রাখা
- ছোটখাটো জিনিসপত্র নির্দিষ্ট স্থানে রাখা
- ডাইনিং টেবিলে প্লেট সাজানো
- বাগানের গাছে পানি দেওয়া
৬–৯ বছর বয়স:
- বিছানা গুছিয়ে রাখা
- ছোট বাসন ধোয়া
- ময়লা ফেলার কাজ
- ঘর ঝাড়ু দেওয়া
- ছোটখাটো রান্নার কাজে সাহায্য করা। যেমন: সবজি ধোয়া, পেঁয়াজ-রসুন খোসা ছাড়ানো ইত্যাদি।
১০–১২ বছর বয়স:
- নিজের পোশাক ধোয়া ও ইস্ত্রি করা
- ফ্রিজ থেকে জিনিস আনা-নেওয়া করা
- সাধারণ রান্না করা
- পরিবারের ছোট সদস্যদের দেখাশোনা করা
১৩ বছর ও তদূর্ধ্ব:
- পুরোপুরি রান্নার দায়িত্ব নেওয়া
- ঘর পরিষ্কার করা
- বাজার করা
- ফিনান্স ম্যানেজমেন্ট শেখানো। যেমন: বাজেট তৈরির প্রাথমিক ধারণা।
কাজ শেখানোর সময় অভিভাবকদের করণীয়
নিয়ম শেখানো: শিশুকে প্রথমে বুঝিয়ে দিন, কীভাবে কাজটি করতে হবে। ধাপে ধাপে নির্দেশনা দিন।
উৎসাহ দেওয়া ও প্রশংসা করা: শিশু যদি ভালোভাবে কাজ করতে পারে, তবে তাকে প্রশংসা করুন। এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
উপহার দেওয়া: মাঝে মাঝে ছোটখাটো উপহার দিলে শিশুরা আরও আগ্রহী হয়ে ওঠে।
কাজের গুরুত্ব বোঝানো: শুধু কাজ শিখিয়ে দেওয়া নয় বরং কেন এটি প্রয়োজনীয় তা বুঝিয়ে দিন। তাহলে শিশুর মধ্যে দায়িত্ববোধ গড়ে উঠবে।
পরিশেষে
একজন সফল ও আত্মনির্ভরশীল মানুষ গড়ে তুলতে হলে ছোট থেকেই তাকে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা দিতে হবে। ঘরের কাজ শুধুমাত্র শারীরিক পরিশ্রম নয় বরং এটি শিশুদের মানসিক ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা রাখে। অভিভাবক হিসেবে আপনার সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত চাইলে আজ থেকেই তাকে ছোট ছোট কাজে অভ্যস্ত করে তুলুন। ভবিষ্যতে আপনার সন্তান একই শিক্ষা দিবে তাদের সন্তানকে।