Press ESC to close

বিটকয়েন আসলে কী?

বিটকয়েন হচ্ছে টাকা, ডলার বা পাউন্ডের মত একটি মুদ্রা। তবে পার্থক্য হচ্ছে এটি ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মুদ্রা; টাকা পয়সার মত হাতে হাতে লেনদেন করা যায় না, কেবল একাউন্ট থেকে একাউন্ট এ লেনদেন করা যায়।

বিটকয়েন বা যেকোন ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে একটি সাধারণ প্রশ্ন শোনা যায়, আর তা হচ্ছে বিটকয়েনের বিপরীতে গচ্ছিত সম্পদ কি?

বিটকয়েনের বিপরীতে কোন সম্পদ গচ্ছিত নাই।সে নিজেই নিজের মুল্যমান। সেই ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে যে যার বিপরীতে কোন সম্পদ নাই তা মানুষ এত টাকা খরচ করে কিনে কেন? বিভিন্ন কারণেই কিনে তবে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে রাতারাতি ধনী হবার জন্য। তবে গল্পটি এমন ছিল না। একদা একটি বিটকয়েনের মুল্য এক টাকা থেকে কম ছিল। বিটকয়েন এর একটি সুবিধা হল এটি রাষ্ট্রের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। ফলে এই লেনদেন অনুসরণ করা যায় না। তাই রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপ এই মুদ্রার মাধ্যমে নিরাপদে করা যায়। অপর একটি সুবিধা হচ্ছে যে বিটকয়েন এর লেনদেনে কোন ট্যাক্স দিতে হয় না। এর ফলে ট্যাক্স এড়াতে অনেকে এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন, এমনকি বেতন গ্রহণ পর্যন্ত শুরু করে।

তবে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাহিরে নিজের স্বাধীন ভাবে বিশ্বের যেই কোন জায়গা থেকে যেই কোন জায়গা, দ্রুত এবং বিনা বাধায় ২৪ ঘণ্টা লেনদেন করা সম্ভব।

এই সবগুলো কারণে বিটকয়েন এর চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে কিন্তু যোগান সীমাবদ্ধ হওয়ায় মুল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। এভাবে দেখা যায় খুব দ্রুত বিটকয়েনের মুল্য ১০০ টাকা হয়ে যায়।

তাছাড়া বিটকয়েন মাইনিং করা ব্যয় বহুল। সেই হিসেবে যারা বিটকয়েন ইকো সিস্টেম চালু রাখে তাদের কর্ম ও সম্পদ হচ্ছে বিটকয়েনের পিছে গচ্ছিত মূল্যমান। তবে এর দাম বৃদ্ধির পিছে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের নজর। হিসাবটা এমন, যেহেতু এক বছরে বিটকয়েনের মূল্য বেড়েছে ১০০ গুণ তার মানে সেই সময়ে এক হাজার টাকার বিটকয়েন কিনলে এক বছরে লাখপতি আর এক লক্ষ টাকার কিনলে এক বছরে কোটিপতি। বিনিয়োগকরীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ার পরে দাম আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

প্রথম দিকে যারা সামান্য কিছু বিটকয়েন সংগ্রহ করেছিল আজ তারা অনেকে বড় জমির মালিক হয়ে গেছেন। আবার কেউ কেউ বেশি পাবার নেশায় আগের পরের সব হারিয়ে বসতভিটাও বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এই সব কিছু বিটকয়েনের মূল উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিটকয়েন আমাদের শোষণমুক্ত মুদ্রাব্যবস্থার যে স্বপ্ন দেখিয়েছে। বর্তমানে চলমান ফিয়াট মূদ্রার ন্যায় এটি ধনী দরিদ্রের বৈষম্য সৃষ্টিকারী না। তার পাশাপাশি এটি সকল প্রকার নজরদারি থেকে মুক্ত এবং স্বাধীন মুদ্রাব্যবস্থা। বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবহার না করে যদি আমরা লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে বিটকয়েন ব্যবহার করি তাহলেই কেবল কাঙ্ক্ষিত সুফল পাবো। ধনী হবার বাজি হিসেবে বিটকয়েন ব্যবহার করার মাঝে কোন কল্যাণ নেই।

লিখেছেন মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রকাশনায়ঃ অপু আলমগীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *