
শিশু স্কুলে যাওয়ার উপযোগী কি না, কিছু বিষয় যাচাই করলে সহজেই তা বুঝতে পারবেন।
আপনার শিশু স্কুলে ভর্তি করার উপযোগী কি না, কিছু বিষয় যাচাই করলে সহজেই আপনি তা বুঝতে পারবেন।
সন্তানকে প্রথমবার স্কুলে দেবেন, এমন বাবা–মায়ের চিন্তার যেন শেষ নেই। দেরি হয়ে গেল কি না কিংবা বেশি আগেই হয়ে যাচ্ছে কি না কিংবা তাদের সন্তান পড়াশুনার চাপ সামলাতে পারবে কি না কিংবা কোন স্কুল ভালো হবে কিংবা কেমন শিক্ষা ব্যবস্থায় স্কুলে ভর্তি করাবেন। এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই সময় কেটে যায়।
এমন একটা সময় ছিল যখন আমাদের দেশে অন্তত ৫/৬ বছরের আগে সন্তানকে স্কুলে ভর্তির কথা ভাবাই হতো না। কিন্তু এখন আড়াই/তিন বছরের শিশুরাও গুটি গুটি পায়ে স্কুলে যায়। এখনও হয়ত সে ঠিকঠাক কথা বলাই শেখেনি, জানে না সামাজিকতার কোন নিয়ম তারপরও তাকে অভিভাবকেরা ভর্তি করছেন। কারণ, তা না হলে শিশুটি হয়ত পিছিয়ে পরবে।
শিশুকে স্কুলে ভর্তির কোন নির্দিষ্ট বয়স আছে কি?
স্কুলে ভর্তির জন্য একেক দেশে একেক বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। যেমন যুক্তরাজ্যে শিশুর জন্ম মাসের ওপর ভিত্তি করে তার স্কুলে ভর্তির সময় নির্ধারণ করা হয়। কোন শিশু যদি বছরের মাঝামাঝি যেমন জুন, জুলাই বা আগষ্টে জন্ম হয়, সে ক্ষেত্রে পরবর্তী জুন, জুলাই বা আগষ্ট মাস ধরে তাদের বয়সের হিসাব ধরা হয় এবং সেই অনুযায়ী স্কুলে ভর্তি করানো হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, পাঁচ বছর বয়সের আগে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির নিয়ম নেই। তবে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে অথবা প্রি-স্কুলগুলোতে আরও কম বয়সে ভর্তি করানো যায়।
শিশুকে স্কুলে ভর্তির জন্য সঠিক বয়স কোনটি, এই বিষয়ে শিক্ষকদের একাংশ মনে করেন, যদিও তারা শিশুদের ২ বা ৩ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তির পক্ষে নন, তারপরও এখনকার পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে মনে করেন, বাড়িতে বসে মোবাইলে বা টিভিতে ইউটিউব দেখার চেয়ে স্কুলে যাওয়াটাই উত্তম।
স্কুলে এই বয়সের শিশুদের মূলত সামাজিকীকরণ, অন্য শিশুদের সাথে মিলেমিশে চলা, দলগতভাবে কাজ করা, রং চেনানো, বিভিন্ন জিনিসের নাম, আকার বা আকৃতি চেনানো হয়।
এতে শিশুটি অন্তত অনেকের সঙ্গে মিশতে পারে, খেলতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে শিশুরা প্রি স্কুলে যায়। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে খায়, খেলে, ঘুমায়। এর মধ্য দিয়ে তাদের একধরনের মানসিক বিকাশ হয়।

কোন বিষয়গুলো যাচাই করলে সহজেই বোঝা যায়, আপনার সন্তান স্কুলে ভর্তি করার উপযোগী হয়েছে কি না
যখন আমরা দেখি শিশুটি তার টয়লেটে যাওয়ার কথা বলতে পারছে, কিছুটা হলেও নিজে নিজে খেতে পারছে, তার কিছু মোটর স্কিলের বিকাশ হয়েছে, তখন তাকে ভর্তির জন্য উপযুক্ত বলে ধরে নিই।
তবে উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে, যত দ্রুত শিশুকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে যাওয়া যাবে, তার বিকাশের জন্য ততই ভালো।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে বোঝা যায়, আগে আমাদের দেশে যৌথ পরিবার ছিল। শিশুরা একটা বড় সময় পরিবারের সদস্যদের কাছে বড় হতো। কিন্তু বিভিন্ন কারনে এখন আমরা একক পরিবার গড়ছি। একজন কর্মজীবী মায়ের মাতৃত্বকালীন ছুটি থাকে ছয় মাস, বাবারতো ছুটি প্রায় নাই বললেই চলে। ছয় মাসের ছুটি শেষে শিশুটিকে বাড়িতে কারও কাছে রেখে মাকে কাজে যেতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেই মানুষটি হন গৃহকর্মী, যার শিশুপালনের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই বা তিনি নিজেও হয়তো শিক্ষিত নন। ফলে শিশুর পূর্ণাঙ্গ বিকাশে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

শিশুর বিকাশ মায়ের গর্ভ থেকেই শুরু হয়ে যায়। তিন বছর বয়সের মধ্যে সাধারণত শিশুর মস্তিষ্কের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বিকাশ হয়ে যায়। ফলে এ সময়টায় শিশুর সঠিক যত্ন নিতে হবে। তার বিকাশের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সে কি শিখছে, কার কাছ থেকে শিখছে, সেগুলো খেয়াল রাখা খুব জরুরি।

তিন বছর বয়সের আশপাশেই শিশু প্রাক-প্রাথমিক ধাপ শুরু করতে পারে। যদিও শিশুর বয়স কিছুটা কম বেশি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে শিশুর ব্যক্তিত্ব, তার আগ্রহ কেমন। সে অনুযায়ী বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিবেন, শিশুর ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।
খেয়াল করুন আপনার শিশু আপনাকে ছাড়া থাকতে পারছে কি না, যদি বেশ খানিকটা সময় মা–বাবাকে ছাড়া থাকতে পারে, এর অর্থ সে স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। এ ছাড়া শিশুটি নির্দেশ পালন করতে পারছে কি না, অন্যদের সঙ্গে নিজের মনের ভাব বিনিময় করতে পারছে কি না, দলগত কাজে আগ্রহী কি না, স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে এগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
বয়সের পাশাপাশি আপনার শিশুর কতটুকু বিকাশ হয়েছে, তা বিচার–বিবেচনা করেই তার স্কুলে যাওয়ার সময় নির্ধারণ করা উচিত।
অর্থাৎ শিশুর স্কুলে ভর্তির সঠিক বয়স স্থান-কাল-পাত্রভেদে সেটি আলাদা হতে পারে।
Leave a Reply